প্রচ্ছদ > শিল্প-সাহিত্য > বইমেলা

বইমেলায় প্রকাশের শীর্ষে কাব্যগ্রন্থ

article-img

বিচিত্র বিষয় নিয়ে প্রকাশনা সংস্থাগুলোরও রয়েছে বিশেষ পছন্দ। গতকাল বৃহস্পতিবার মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশনী প্রকাশ করছে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় ও ভিন্ন ভিন্ন রুচির বই। আবার কিছু প্রকাশনী আছে নির্দিষ্ট লেখকনির্ভর।

 

এত বিচিত্র বিষয়ের বইয়ের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত চাহিদা কমতে থাকলেও মেলায় সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হচ্ছে কবিতার বই। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। কবিতাগ্রন্থের কদর কমল কেন, জানতে চাইলে মেলার মাঠে দাঁড়িয়ে প্রতীক প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার নূর-ই-মোনতাকিম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের দেশে ভালো কিছু প্রকাশনী আছে, যারা ভালো মানের কবিতার বই প্রকাশ করে। সবাই কিন্তু কবিতার বই ভালো ছাপতে পারে না। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বলেছিলেন, কবিতা হচ্ছে পণ্ডিত ব্যক্তিদের জন্য। আর গল্প-উপন্যাস হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য। কবিতা পড়তে যে জ্ঞান দরকার, সেটা সবার থাকে না। আর পাঠক সব বিষয় যে সব সময় পড়বে তেমনটাও বলা যায় না। তবে কবিতার বই প্রকাশিত হচ্ছে, হবে। কাল বলে দেবে কবিতার ভবিষ্যৎ। ’

কথা প্রসঙ্গে তিনি আরো জানান, প্রতীক-অবসর মিলিয়ে মেলায় নতুন বই এনেছে এ পর্যন্ত ৩০টি। এর মধ্যে উপন্যাস বেশি।

এবার মেলায় লেখকদের উপস্থিতি কম হলেও নিয়ম করে প্রতিদিন মেলায় আসছেন লেখক মুহিত কামাল। বেশ কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁর গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ফলে আজ এই স্টলে বসছেন তো কাল অন্য স্টলে। বইমেলা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এবারের মেলা আমার কাছে অসাধারণ একটি মেলা। বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণজুড়ে বড় স্বস্তির মেলা। আমি মনে করি, এখনো যাঁরা বইমেলায় আসেননি তাঁদের আসা উচিত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাচ্চাদের নিয়ে বইমেলায় এলে ভয়ের কিছু নেই। ’

তিনি বলেন, ‘শহুরে বন্দি জীবন থেকে শিশুদের বন্ধু হয়ে সময় দিতে পারে বই। শিশুদের বইমুখী করতে দায়িত্ব নিতে হবে মা-বাবাকে। পড়তে হবে তাঁদেরও। কারণ, শিশুরা অনুসরণ করে মা-বাবাকে। এই চর্চা শুরুও হয়েছে। অনেক মা-বাবাকে দেখা যাচ্ছে সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসে বই কিনছেন, সময় কাটাচ্ছেন। ’

গতকাল মেলায় এসেছে নতুন ১০৮টি বই। এর মধ্যে গল্পগ্রন্থ ১৮টি, উপন্যাস ১২টি, প্রবন্ধগ্রন্থ দুটি, কবিতাগ্রন্থ ৬০টি, গবেষণাগ্রন্থ দুটি, বাকিগুলো অন্য বিষয়ের। মেলায় নতুন আসা বই থেকে চারটি গ্রন্থের পরিচিতি কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :

মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি

বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামের বিশ্বনন্দিত ‘দি আলটিমেইট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স’ বইয়ের বাংলা অনুবাদ ‘মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি’। বইটি অুনবাদ করেছেন অনঙ্গভূষণ দাস। মেলায় বইটি প্রকাশ করেছে নাগরী প্রকাশনী। রহস্যে ঘেরা আমাদের এই মহাবিশ্ব। অনন্ত মহাবিশ্বে নিয়ত গ্রহ-নক্ষত্র ঘিরে কতজনের কত মত, কত জিজ্ঞাসা। মহাকাশের বিস্ময়কর নানা তথ্য পর্যবেক্ষণসহ এ রকম অনেক জিজ্ঞাসার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন লেখক তাঁর এই বইয়ে।

মানুষের ডেরায় স্বপ্নের খুঁটি

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘মানুষের ডেরায় স্বপ্নের খুঁটি’ মেলায় এনেছে স্বপ্ন-৭১। ছেলেমেয়েরা নিজেরা নিজেরা কথা বলে, তখন আমির উদ্দিন স্বপ্নের ভেতর ডুবে যান। স্বপ্নের ভুবন একটি যুদ্ধক্ষেত্র। যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝ দিয়ে হেঁটে যাওয়া। ওঁর সামনে ক্যানভাস নেই। হাতে অস্ত্র। চারপাশে ধ্বংস ও মৃত্যু। আছে বুকের ভেতরের বড় ইজেলে স্বাধীনতার বিচিত্র রং। রঙের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। চোখে দেখা রঙের বাইরেও অজস্র আলোর ফুলকি ঝলকায়। এই বইয়ে এমনই সব ঘটনার মখোমুখি দাঁড়াবে পাঠক।

শতবর্ষে সত্যজিৎ

বিধান সাহার সম্পাদনায় ‘শতবর্ষে সত্যজিৎ’ বইটি প্রকাশ করেছে শ্রী প্রকাশনী। মেলায় বইটি পাওয়া যাবে বাতিঘর ও ভিন্নচোখ প্রকাশনীর স্টলে। এ বছর সত্যজিৎ রায়ের শততম জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। প্রায় ২৯ বছর আগে তাঁর দেহান্তর ঘটলেও এখনো তাঁর স্মৃতি সৃজনশীল মানুষের ভাবনায় উজ্জ্বল। চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়কে আমরা বেশি জানলেও তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। এই বইয়ে সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টিশীলতার নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।

আমরণ

সুহৃদ শহীদুল্লাহর কাব্যগ্রন্থ ‘আ মরণ’ মেলায় এনেছে অসবর্ণ প্রকাশনী। সুহৃদ শহীদুল্লাহর কবিতা অনূদিত হয়েছে ফরাসি, ইংরেজি, জার্মান, চীনা, পর্তুগিজ ও রুমানিয়ান ভাষায়। চমৎকার কাব্যভাষার জন্য গ্রন্থটি পাঠে পাঠক আরাম পাবে।

মূলমঞ্চের আলোচনা

বইমেলার মূলমঞ্চে গতকাল বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘স্মরণ : মোহাম্মদ আবদুল কাইউম ও বশীর আল্ হেলাল’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসান হাফিজ। আলোচনায় অংশ নেন মুমিত আল রশিদ ও পারভেজ হোসেন। সভাপতিত্ব করেন মোরশেদ শফিউল হাসান।

লেখক বলছি

লেখক বলছি মঞ্চে গতকাল নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেছেন মারুফ রায়হান ও টোকন ঠাকুর।